ওয়াং হাইমান (ঊর্মি)
স্থানীয় সময় গত ২০ আগস্ট ইইউ কমিশন চীনের বিদ্যুতচালিত যানবাহনের বিরুদ্ধে ভর্তুকি-বিরোধী তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে চীনে উৎপাদিত বিদ্যুতচালিত যানবাহনের ওপর ১৭ থেকে ৩৬.৩ শতাংশ ভর্তুকি-বিরোধী শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদী প্রস্তাব কার্যকর হলে, চীনা অটোমোবাইল শিল্পই শুধু গুরুতর ক্ষতির শিকার হবে না, বরং চীন ও ইউরোপের সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনের সহযোগিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মানে, এ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ইইউ’র ভোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ভোগাবে।
বিশ্ব লক্ষ্য করছে যে, জুলাই মাসে ঘোষিত প্রাথমিক প্রতিবেদনের সাথে তুলনা করলে, ইউরোপীয় পক্ষ এবার বেশ কয়েকটি চীনা গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর শুল্কের হার কিছুটা হ্রাস করেছে। ইউরোপীয় পক্ষের আচরণ থেকে কিছুটা ছাড় ও সমঝোতা করা হয়েছে বলে মনে হয়। তবে, বাস্তবে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম ও ধারণার অপব্যবহার করে, তদন্তকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ‘ন্যায্য প্রতিযোগিতার’ নামে ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে ইউরোপীয় কমিশন চীনা বিদ্যুতচালিত যানবাহনের বিরুদ্ধে ভর্তুকি-বিরোধী তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউরোপীয় পক্ষের ধারাবাহিক তৎপরতায় ন্যায্যতা ও বৈধতার অভাব স্পষ্ট। একদিকে, তথাকথিত ‘তদন্তে’ স্পস্ষ্টভাবে বাজারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি; অন্যদিকে, পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য, ইসি তথাকথিত ‘ভর্তুকি’ প্রকল্পটি হাতে নেয় এবং অতিরঞ্জন করে। তদন্তের আওতায় রপ্তানির শীর্ষে থাকা ইউরোপীয় ও আমেরিকান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রাখা হয়নি এবং কেবল চীনের স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। তাই, গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ায় অনেক অনিয়ম, অস্বচ্ছতা এবং অন্যায় হয়েছে।
চলতি বছরের জুনের শেষের দিকে, চীন ও ইইউ বিদ্যুতচালিত যানবাহন নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে, বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছে। অথচ, ইউরোপীয় পক্ষ আলোচ্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে চীনের মতামত গ্রহণই করেনি। তারা তাদের ভুল পদ্ধতির ওপর অবিচল থেকেছে। এর ফলে প্রতিবেদনটি হয়েছে সম্পূর্ণ একতরফা। অথচ, ইউরোপে প্রায়ই ‘নিয়ম, আইনের শাসন, ও ন্যায্যতার’ কথা বলা হয়।
একশ্রেণির ইউরোপীয় রাজনীতিবিদের অপচেষ্টায়, চীনের বিদ্যুতচালিত যানবাহন শিল্পের ওপর ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। খোদ ইউরোপে এহেন আচরণ সমালোচিত হচ্ছে। কোনো কোনো যৌক্তিক রাজনীতিবিদ ও ইউরোপীয় ব্যবসায়ী এর বিরোধিতা করেছেন ও করছেন। জার্মান চ্যান্সেলরসহ অনেক ইউরোপীয় নেতা প্রকাশ্যে গাড়ি-বাণিজ্যকে সীমাবদ্ধ করার বিরোধিতা করেছেন; বাণিজ্যকে ‘ন্যায্য ও মুক্ত’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ ‘টাইমস’-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ইইউ একদিকে ভোক্তাদেরকে বিদ্যুতচালিত যানবাহনের দিকে আকৃষ্ট হতে বলে এবং অন্যদিকে, বিদ্যুতচালিত যানবাহনকে বাজারে সহজে আসতে দিতে নারাজ, যা হাস্যকর।
চীন ও ইউরোপ বিদ্যুতচালিত যানবাহনের শুল্ক নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে এমন এক সময়ে, যখন ইউরোপের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে আছে। শক্তির রূপান্তর ও আর্থিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, কিছু ইউরোপীয় দেশ পৃথক পৃথকভাবে চীনা গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দেশে বিনিয়োগ ও কারখানা নির্মাণে উত্সাহ দিচ্ছে। সম্প্রতি ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির চীন সফরকালে, দু’পক্ষের মধ্যে নতুন জ্বালানির যানবাহনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে: ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি এ বাস্তবতা থেকে শিখবে। সময়ই এ প্রশ্নের উত্তর দেবে।
লেখিকা: ওয়াং হাইমান (ঊর্মি)
সাংবাদিক, বাংলা বিভাগ
চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং চীন।
(মতামত বিভাগে প্রকাশিত লেখার দায় লেখকের নিজের)