ব্যক্তিগত একটি গাড়ি দ্রুত ছুটছে। গাড়ির চার চাকার মধ্যে আটকে আছে এক নারী। গাড়ির নিচে সেই নারীকে নিয়েই গাড়িটি ছুটছে। পেছনে পথচারী, রিকশাওয়ালা, মটরসাইকেল চালক সবাই ডাকছেন চালকে, থামতে অনুরোধ করছেন কিন্তু তাও গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। আর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছেন সেই নারী।
না কোনো সিনেমার দৃশ্য নয় এটি। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত এমন দৃশ্য দেখেছেন কয়েক হাজার মানুষ। চারুকলার সামনে থেকে যখন গাড়িটি যাচ্ছিল ঠিক তখনই গাড়ির সামনে পড়ে যায় রুবিনা আক্তার (৪৫) নামের এক নারী। সঙ্গে আরো একজন। কিন্তু গাড়ি না থামিয়ে রাজু ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার পথ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় গাড়িটি। সাধারণ মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তাড়া খেয়ে গাড়ি চালক গাড়িটি থামাতে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে চালকে গণপিটুনি দেওয়া হয়।
আহত অবস্থায় নারী ও গাড়ি চালক’কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রুবিনা আক্তারকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গাড়ি চালক আফহার জাফর শাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. মাকসুদ গণমাধ্যমকে জানান, ওই নারীকে গুরুতর অবস্থায় নিয়ে আসা হলে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আর প্রাইভেটকারের চালক চিকিৎসাধীন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, তখন টিএসসিতে আমরা। গল্প আর আড্ডায় ব্যস্ত। হঠাৎ দেখলাম একটি গাড়ি আমাদের পাশ দিয়ে নারীকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এটা দেখে আমরা আশেপাশের রিকশাওয়ালা, বাইকার, সাধারণ শিক্ষার্থী তাকে তাড়া করে নীলক্ষেতে গিয়ে আটকাই। ওই নারীর দেহ এক পাশ পুরো ছিঁড়ে গেছে। তবে হাত পা ঠিক ছিল, তিনি জীবিতও ছিলেন। পরে পুলিশ এসে তাদের ঢামেকে নিয়ে যায়।
ওই নারীর দেবর নুরুল আমিন জানান, তাদের বাসা হাজারীবাগ এলাকায়। তেঁজগাও থেকে ভাবীকে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে তারা বাসায় আসছিলেন। শাহবাগ মোড়ে আসলে প্রাইভেটকার তাদেরকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। তখন রুবিনা আক্তার প্রাইভেটকারের বাম্পারের সাথে আটকে যায়। এ অবস্থায় তাকে টেনে হিঁচড়ে প্রায় নীলক্ষেত পর্যন্ত নিয়ে যায় প্রাইভেটকারের চালক। পরে স্থানীয় জনতা গাড়িটিকে আটক করে।